THE CENTENARY POST, dedicated to - The Place, The Language and Her People - BENGAL
Monday, May 9, 2011 by Sunrita
আমি আর স্পীচলেস, স্পীচলেস এর শততম পোস্টটিতে আপনাদের স্বাগত জানাই।
এটি রচনা করার আগে আমি কিছু সময় পোস্ট টির বিষয় সম্বন্ধে ভেবেছি, আর বিষয় যেহেতু “বাংলা ভাষা” তাই স্বদেশীয় ভাষা তেই পোস্ট টি সম্পূর্ণ করব বলে মনস্থির করেছি। বিগত দুই বছর আমি কলকাতা ছেড়ে রাজস্থানে পড়াশোনা করছি, এখানে এসে হিন্দিতে একটু পাকাপক্ত হয়েছি আর যত বাঙালির সাথে কথা বলেছি, ততই অবাক হয়েছি এই দেখে, যে তারা বাংলা ভাষার থেকে দূরে বহু দূরে চলে যাচ্ছে। গতকাল টেলিফোনের মাধ্যমে আমার দুই বান্ধবীর সাথে কথা বলছিলাম, একজনের একটি প্রশ্নের উত্তরে আমি “ক্রমশ প্রকাশ্য” বলাতে দেখলাম যে সে, সেই কথাটি উচ্চারন করতে গিয়ে দুবার হোঁচট খেলো। কনভেন্ট স্কুলে আমরা সকলেই পড়াশোনা করেছি কিন্তু ভেবে খারাপ লাগে যে বাংলা ভাষাটি, যেটি কি না আমাদের মাতৃভাষা, সেটি’র থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন্প্রায় করতে বসেছি। ভেবে আরও ভয় করল যে আমার এই বান্ধবীটি একটি সদ্য-জাত শিশুর মা। আমাদের আগামী প্রজন্ম বাংলা ভাষা বলতে পারবে তো? বঙ্কিমচন্দ্র না হয় নাই বা পড়ল, সুকুমার রায় পড়বে তো?
মানছি, যে রবীন্দ্রনাথ সহস্র তে একজন, কিন্তু ভেবে দেখুন তো, যে সময় মিডিয়া র এত দৌরাত্রি ছিল না, সেই সময় তেও তিনি বাংলা ভাষায়ে গদ্য, কাব্য, সংগীত ইত্যাদি রচনা করে বিশ্ব-জোড়া ক্ষ্যাতি অর্জন করেছিলেন। আজ রবীন্দ্রনাথের দেড়শত জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে এই যে এত ধুমধাম, এত কর্মযজ্ঞ, তারই সৃষ্টির মাধ্যমে এই যে তার স্মৃতি-চারণ করা, সেটি বাংলা সাহিত্যের প্রতি তার অসামান্য অবদানেরই পরিচয় মাত্র। সত্যজিৎ রায় এর কটি ইংরাজি কাজ আছে বলুন দেখি, তাও তাকে আবাল-বৃ্দ্ধ-বণিতা সকলে একবাক্যে নমন জানায়। উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী বাংলা ভাষায় শিশু সাহিত্যের সৃষ্টি করেছিলেন আর সেই ধারা পরবর্তি প্রজন্মের লেখক/লেখিকারা অব্যাহত রেখেছেন। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুকুমার রায়, রাজশেখর বসু, লীলা মজুমদার ইত্যাদি আরও বহু রচয়িতার অনুদান অপরিসীম।
এই স্বল্প পরিসরের মাঝে যাঁদের উল্ল্যেখ বাদ পড়ে গেলো তাঁরা এবং তাদের অনুগামী’রা আমায় নিজগুণে ক্ষমা করবেন। তবে এখানে আমার এক বান্ধবী’র কথা না লিখে পারছিনা। নাম তার প্রিয়াঙ্কা, বাবা অবসরপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ বেসরকারী কর্মচারী। বাবা’র কর্মসূত্রে প্রিয়াঙ্কা কখনও কোলকাতা আবার কখনও বা হায়দেরাবাদ এ থেকে পড়াশুনা করেছে, এবং প্রথম পত্র ইংরিজি হলেও দ্বিতীয় পত্র হিন্দি নিয়ে পাশ করেছে, কিন্তু তথাকথিত অনেক এই-প্রজন্মের-বাঙ্গালীর চাইতে অনেক বেশি বাংলা ভাষায়ে সে স্বচ্ছন্দ্য। বলতে বাধা নেই, যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর “চাঁদের পাহাড়” আজ থেকে চার বছর আগে ওই আমার হাতে তুলে দিয়েছিল। আর সবশেষে যাকে ধন্যবাদ না জানালে আমার এই সামান্য প্রয়াসটি বৃথা থেকে যাবে, তিনি অতি অবশ্যই আমার মা, যিনি হাতে ধরিয়ে এই ভাষাটি’ র সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন, যিনি এই অতলস্পর্শি সাহিত্য সম্ভারের সাথে আমার যোগসূত্র ও ভালোবাসা স্থাপন করে দিয়েছিলেন। হয়ত সেইজন্যই স্বদেশীয় ভাষাকে মাতৃভাষা বলা হয় (মাদারস ডে তে আমার মায়ের উদ্যেশ্যেও এই লেখাটি উৎসর্গিত)। আর সেই সকল গুরুজনদের, যারা কোনও না কোনও অনুষ্ঠানে আমার হাতে একটি-দুটি করে বাংলা বই তুলে দিয়েছিলেন।
আজকের দুনিয়ায় বন্ধুর বড় অভাব। ছোটদের হাতে তাই বন্ধুরূপী গল্পের বই তুলে দিন। দুটি ইংরিজি বই এর ফাঁকে একটি “চাঁদের পাহাড়” অথবা একটি “রাজ কাহিনী” অথবা একটি “প্রফেসর শঙ্কু” তুলে দিন। বঙ্গ সাহিত্যের এই মনি-মুক্তা খচিত সুবিশাল ভাণ্ডারের সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দিন। বড় হয়ে আপনাকেই ধন্যবাদ জানাবে তারা।
বড়ই প্রাসঙ্গিক